শেষ বিকেলের বিদায়
বিকেলটা আজ একটু বেশি নীরব। চারপাশে হলুদ রোদের ছায়া, গাছের পাতাগুলো কেমন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। তিথি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, চোখের কোণে এক বিন্দু জল। আজ তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিন।
তিথি আর আদিত্য— ছেলেবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছে, একই গলিতে খেলেছে, একই স্কুলের পথে হেঁটেছে। বন্ধুত্বটা কখন ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে, কেউ বুঝতেই পারেনি। তবে ভালোবাসা বোঝার পর থেকেই তাদের জীবনে শুরু হয়েছিল নতুন গল্প, নতুন স্বপ্ন।
কিন্তু জীবন কি সব সময় মনের মতো চলে?
তিথির বাবা-মা কখনোই আদিত্যকে মেনে নেননি। তাদের মতে, আদিত্য ছিল শুধু একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, যার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আর তিথির জন্য তারা চেয়েছিল এমন কাউকে, যে প্রতিষ্ঠিত, যার সমাজে একটা অবস্থান আছে।
তিথি লড়াই করেছিল, অনেকবার বাবা-মাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বরং তার উপর বাড়ির শাসন আরও কড়াকড়ি করা হলো। মোবাইল কেড়ে নেওয়া হলো, কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হলো, জানলার কাছে দাঁড়ানো পর্যন্ত নিষেধ করা হলো।
আদিত্যও কম চেষ্টা করেনি। সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ভালো একটি চাকরি পাওয়ার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছিল। কিন্তু সমাজের নিয়ম এত সহজে বদলায় না।
আজ তিথির বিয়ে।
একজন সম্পূর্ণ অচেনা মানুষের সঙ্গে, যে হয়তো তাকে কোনোদিন বুঝতেও পারবে না।
আদিত্য জানত, সে কিছুই করতে পারবে না। তাই শেষবারের মতো তিথির বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল।
তিথিও জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছিল। তার মন চিৎকার করে বলতে চাচ্ছিল— "আমাকে নিয়ে চলে যাও!" কিন্তু বাস্তবতা এত সহজ ছিল না।
একটু পরেই শোভাযাত্রার সানাই বাজতে শুরু করল। তিথি চোখের জল মুছে নিল।
অন্যদিকে, আদিত্য ধীরে ধীরে চলে গেল অন্ধকারের দিকে, যেখানে কোনো আলো ছিল না, ছিল না কোনো স্বপ্ন…
শুধু রয়ে গেল শেষ বিকেলের বিদায়।